সদরঘাট | ভ্রমণকাল

সদরঘাট

সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল
ঢাকার সদরঘাট শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক স্থান। শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে গড়ে ওঠা এই নৌবন্দরটি প্রায় দুই শতাব্দী ধরে ঢাকা শহরের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জীবনকে প্রভাবিত করে আসছে। এটি কেবল একটি নৌবন্দর নয়, বরং একটি ইতিহাসের অংশ, যা নগর জীবনের চিত্র তুলে ধরে।

বহুল প্রতিক্ষীত পদ্মা সেতু চালু হবার পরে যদিও সদরঘাটের জৌলুশ হারিয়েছে তারপরেও বর্তমানে দক্ষিণাঞ্চলের অনেক জেলা সমূহের যাতায়াতের জন্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই নন্দী বন্দর। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে লঞ্চ ও স্টিমার পটুয়াখালী, বরিশাল, বরগুনা, ভোলা, ঝালকাঠি, মাদারীপুর, চাঁদপুর, খুলনা, হাতিয়া এবং বাগেরহাট সহ বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলায় প্রায় ৪৫টি রুটে চলাচল করে।

সদরঘাটের ইতিহাস

সদরঘাটের গোড়াপত্তন ঠিক কবে হয়েছে তার সঠিক তথ্য ইতিহাসে অজানা। তবে এটি প্রায় হাজার বছরের পুরনো বলে ঐতিহাসিকদের ধারণা। জানা যায় প্রাচীন জনপদ, সভ্যতাগুলোর উত্পত্তি ও ক্রমবিকাশ নদীকে কেন্দ্র করে। সভ্যতার অগ্রগতিও হয়েছে নদীর গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে। ঢাকা নগর হিসেবে গড়ে উঠেছিল ‘ঢক্কা’ নামের বৃক্ষবহুল বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে।

বুড়িগঙ্গা নদীর প্রাচীনত্ব দুই হাজার বছর আগে রচিত কালিকা পুরাণে 'বৃদ্ধগঙ্গা' নামে উল্লেখ করা হয়েছে। আকবরনামায় ঢাকাকে থানা বা সামরিক ফাঁড়ি এবং আইন-ই-আকবরীতে সরকার বাজুহার পরগনা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। মূল ভূখণ্ডের কেন্দ্রস্থলে নদীর অবস্থান এবং সমগ্র দেশের সাথে নৌ-যোগাযোগের সব দিক দিয়ে ভালো হওয়ায় তৎকালীন নগর স্থপতিরা প্রতিরক্ষা, প্রশাসন, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব ধরনের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এই স্থানটিকে বেছে নেন। .

সদরঘাট নদীবন্দর ঢাকা শহরের বাণিজ্যিক জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এখানে ছোট বড় বিভিন্ন ধরনের লঞ্চ, স্টিমার এবং নৌকাগুলি নোঙর করে। গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা ও পদ্মা নদীর সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে এই বন্দর ঢাকা শহরের সঙ্গে দেশের অন্যান্য অংশের যোগাযোগ সহজতর করে। সদরঘাট কেবল একটি নৌবন্দর নয়, বরং একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রও বটে। এখানকার কোলাহলপূর্ণ পরিবেশ, নদীর পাশের ছোট ছোট দোকানপাট, এবং নানান প্রকারের নৌযানের চলাচল স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যটকদের আকর্ষণ করে। এখানকার বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী খাবার এবং স্থানীয় শিল্পকর্ম দেখতে পাওয়া যায়, যা ঢাকা শহরের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য তুলে ধরে।

কিভাবে যাবেন

ঢাকা শহরের যে কোন স্থান থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আসা যায়। যেখান থেকে রিক্সায় বা পায়ে হেটেই যাওয়া যায় সদরঘাট। এছাড়া গুলিস্থান মোড়/গোলাপ শাহ্ মাজার/গুলিস্থান পাতাল মার্কেট এসেও রিক্সায় যেতে পারবেন সদরঘাটে। তাছাড়া ঢাকার শহরের ঐতিহ্যবাহী ঘোড়ার গাড়িতে চড়েও যেতে পারেন সদর ঘাট। ব্যাক্তিগত গাড়ি কিংবা সিএনজিতে করে সরাসরি সদরঘাট যেতে পারবেন।।

সদরঘাটে কি দেখবেন

সদরঘাটে আসলেই আপনি দেখতে পাবেন বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর ও সবচেয়ে বড় নৌযান। আপনি যখনই যান লঞ্চ ঘাটে সেই বিশাল নৌযান গুলো দেখতে পাবেন। লঞ্চঘাটের বিশাল এড়িয়া ঘুরে ঘুরেও দেখতে পারেন। আপনি নিশ্চিত একটি ভিন্ন অভিজ্ঞতা পাবেন.

এছাড়া এখানে নৌকায় বুড়িগঙ্গা নদীতে ভ্রমণ করতে পারবেন অথবা ছোট ছোট নৌকায় বুড়িগঙ্গা নদীর এপার ওপার যাতায়াত করতে পারেন। সদরঘাটের খুব কাছেই রয়েছে আহসান মঞ্জিল। সময় মিলে গেলে সেখান থেকে ও ঘুরে আসেতে পারেন।

কোথায় খাবেন

সদরঘাটের সামনেই কিছু খাবারের দোকান রয়েছে। এছাড়া পুরান ঢাকার মজার খাবার খেতে চাইলে যেতে পারেন লক্ষীবাজার, নারিন্দা কিংবা নাজিরা বাজার। জনসন রোডের হোটেল স্টার, বাংলাবাজারের নিউ ক্যাফে কর্ণার ও বিউটি বোর্ডিং পুরান ঢাকার খুবই পরিচিত স্থান। বাজেট নিয়ে সমস্যা না থাকলে সদরঘাটে Buriganga Riverview Restaurant যেতে পারেন। যেখান থেকে সদরঘাটের সুন্দর দৃশ্য দেখতে পারবেন।

আশেপাশের দর্শনীয় স্থান

সদরঘাট এর পাশেই আহসান মঞ্জিল, বাহাদুর শাহ পার্ক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, আর্মেনিয়ান চার্চ, তারা মসজিদ, লালবাগ কেল্লা সহ নানা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে। পুরান ঢাকার একদিনের প্ল্যানে অনেক গুলো জায়গাই ঘুরে দেখতে পারবেন।
দৃষ্টি আকর্ষণ: আমাদের পর্যটন স্পট গুলো আমাদের দেশের পরিচয় বহন করে এবং এইসব পর্যটন স্পট গুলো আমাদের দেশের সম্পদ। এইসব স্থানের প্রাকৃতিক কিংবা সৌন্দর্য্যের জন্যে ক্ষতিকর এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকুন। আর ভ্রমনে গেলে কোথাও ময়লা ফেলবেন না। দেশ আমাদের, দেশের সকল কিছুর প্রতি যত্নবান হবার দায়িত্বও আমাদের।
ভ্রমণকাল: আমাদের টিম সবসময় চেষ্টা করে আপনাদের কাছে হালনাগাদ তথ্য উপস্থাপন করতে। যদি কোন তথ্যগত ভুল কিংবা বানান ভুল হয়ে থাকে বা ভ্রমণ স্থান সম্পর্কে আপনার কোন পরামর্শ থাকে অথবা আপনার কোন ভ্রমণ গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করতে চান তাহলে Comments করে জানান অথবা আমাদের কে ''আপনার মতামত'' পেজ থেকে মেইল করুন।